অদম্য মেধাবীদের গল্প ওদের উচ্চ শিক্ষা অর্জনে বড় বাঁধা দারিদ্র্যতা
গরীব ঘরে জন্ম ওদের। সুখের দেখা জুটেনি ভাগ্যে। এক বেলা খাবার জুটলে আরেক বেলা খাবার চিন্তা তাদের তারা করে বেড়ায়। তবুও নানা প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে জীবন যুদ্ধে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন ওদের চোখে মুখে। ওরা যেন গোবরে পদ্ম ফুল।এদের কারো বাবা ভ্যান চালুক ,কেউ দরিদ্র কৃষক, কারো বাবা দিন মজুর। তাদের সন্তানরা এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করলেও উচ্চ শিক্ষা কিভাবে গ্রহন করবে, সে চিন্তা ওদের সারাক্ষণ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারবে কী না এ চিন্তায় শঙ্কিত তারা। সমাজের বিত্তবানদের একটু সহানুভুতি পেলে কাউনিয়ার ৪ অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন পূরন হবে।
জান্নাতুল তাবাসসুম রীতাঃ দরিদ্র ঘরে জন্ম জান্নাতুল তাবাসসুম রীতার । নতুন বই কিনে পড়ালেখা করতে পারেনি সে। দরিদ্রতা আর নানা প্রতিকুলতার সাথে যুদ্ধ করে ইমামগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। উপজেলার ঠাকুরদাস গ্রামের বাসিন্দা ভ্যান চালক মোঃ ওসমান গনি ও গৃহিনী মোছাঃ পারভীন বেগমের কন্যা সে। বাড়ি ভিটা ছাড়া আর কোন জমি- জমা নেই তাদের। ২ বোন ১ভাই পিতা-মাতা নিয়ে ৫ জনের সংসার। ভ্যান চালক বাবার সামান্য রোজকারের টাকায় কোন রকমে চলে সংসার। রীতা পড়ার খরচ জোগাতে নিজে প্রাইভেট পড়িয়েছে। পারভীন বেগম বলেন মেয়ের অনেক স্বপ্ন লেখাপড়া শিখে ডাক্তার হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরুণে অর্থের যোগান হবে কি ভাবে ? তার স্বপ্ন পূরনে এখন বড় বাঁধা দারিদ্রতা।
মোছাঃ আন্দালিবঃ কাউনিয়া উপজেলার ধর্ম্মেশ্বর মহেশা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে অংশ নিয়ে গোল্ডেন জিপি এ-৫ পেয়েছে মোছাঃ আন্দালিব । উপজেলার নাজিরদহ কুটিরঘাট গ্রামের দরিদ্র দিন মজুর খালেকুজ্জামান ও গৃহিনী মোছাঃ মিনু আক্তারের কন্যা সে। চরম অর্থ সংকটের মাঝেও এবার এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে সে। দরিদ্রতার সাথে লড়াই করে এসএসসি পাস করলেও উচ্চ শিক্ষা গ্রহন নিয়ে এখন দুচিন্তায় পড়েছে আন্দালিব । তার শিক্ষার খরচ জুটবে কিভাবে এচিন্তায় বিভোর তার দরিদ্র পিতা মাতা। মাত্র ৬ শতাংশ জমিতে বাড়ি ভিটা তাদের। আর কোন জমিজিরাত নেই। দারিদ্র্যতা কে জয় করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে সে। মা মিনু আক্তার মেয়ের সাফল্যে খুশি হলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। মেয়ে চায় ডাক্তার হতে, কিন্তু দরিদ্র পরিবারের পক্ষে কিভাবে তা সম্ভব। সংসারে একজন মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনিও প্রায় থাকেন অসুস্থ। মাঝে মাঝে কাজে গিয়ে যে রোজকার টুকু হয় তা দিয়েই চলে তাদের সংসার। তিনি মেয়ের জন্য সকলের কাছে দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।
রুবাইয়া রুহুল বর্ষাঃ দারিদ্রতা ও অর্থ সংকট দমিয়ে রাখতে পারেনি কাউনিয়া উপজেলার ঠাকুরদাস গ্রামের দরিদ্র বর্গা চাষী মোঃ রুহুল আমিনের কন্যা বর্ষা কে। চরম অর্থ সংকটেও বর্ষা এবার এসএসসি পরীক্ষায় ইমামগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। দারিদ্রতার সাথে লড়াই করে এসএসসি পাস করলেও উচ্চ শিক্ষা গ্রহন নিয়ে এখন দুঃচিন্তায় পড়েছে বর্ষা। মা মাহমুদা আক্তার জানায় বাড়ী ভিটা ছাড়া কোন জমি জিরাত নেই তাদের। ওরা ১ ভাই ১বোন। ভাই টি বাক প্রতিবন্ধি। অভাবের মাঝেও সব প্রতিবন্ধকতাকে পদদলিত করে ভালো কলেজে পড়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বর্ষা পিতা মাতা মেয়ের সাফল্যে খুশি হলেও মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছেন তারা। মেয়ে চায় ডাক্তার হতে, কিন্তু দরিদ্র পিতা- মাতার পক্ষে কিভাবে তা সম্ভব। তিনি মেয়ের জন্য সকলের কাছে আর্শিবাদ ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।
আহসান হাবীব: দরিদ্র ঘরে জন্ম আহসান হাবীব রনির। ভাল জামা কাপড়, নতুন বই খাতা এমন কি পেট ভরে ভাত জুটেনি রনির ভাগ্য। তবুও সে কঠোর পরিশ্রম করে কাউনিয়া মোফাজ্জল হোসেন মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এস এস সি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। শুধু তাই নয় উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে রনি। সে উপজেলার হরিচরন লস্কর গ্রামের দরিদ্র কাপড়ের দোকানের কর্মচারী আব্দুস সাত্তারের পুত্র। ৫ শতক জমির উপর বাড়ি ভিটা ছারা কোন জমিজিরাত নেই তাদের। তারা দুই ভাই পড়ালেখা করছে। রনি চায় ডাক্তার হতে কিন্তু তার পিতার তো সে সামর্থ্য নেই। তাই বিত্তবান মানুষের কাছে সাহায্য কামনা করেছেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
ধন্যবাদ আপনাকে স্যার